হঠাৎ কিছু সেকেন্ডের জন্য ব্ল্যাকআউটের কারণ কিন্তু গুরুতর রোগের সংকেত, প্রতিরোধে কী উপায় থাকতে পারে?

 

হঠাৎ কিছু সেকেন্ডের জন্য ব্ল্যাকআউটের কারণ কিন্তু গুরুতর রোগের সংকেত,  প্রতিরোধে কী উপায় থাকতে পারে?


চলতে চলতে মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো সমস্যা একটি দৈহিক দুর্বলতা নয়, এটি অনেকের মধ্যে ঘটতে পারে, যা চোখের সামনে অন্ধকার দেখার মতো মাঝেমধ্যে ঘটতে পারে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, কয়েক মুহূর্তের জন্য অজ্ঞান হওয়ার মাধ্যমে এটি একটি "সাড়েন ব্ল্যাকআউট" হতে পারে। এই অবস্থা কয়েক মিলিসেকেন্ড থেকে কিছু মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি হলো বড় বিপদের পূর্বলক্ষণ, এটি হয়তো নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু এটি স্মৃতিতে তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে এবং হারিয়ে যেতে পারে স্মৃতি।

এই ধরণের সমস্যা হলে কিছু মানুষ মনে করে এটির জন্য ব্লাড প্রেসার সমস্যা হতে পারে এবং এটি শারীরিক দুর্বলতা হিসেবে অগ্রাহ্য করে। তবে, এই সমস্যাটি শারীরিক দুর্বলতা না হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, এটি একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে।

এই ধরনের সমস্যা হলে সতর্কতা অবশ্যই প্রয়োজ্য। এর কারণে তা চিকিৎসা অতি তারাতারি নিতে  হতে পারে।

ব্ল্যাক আউটের ধরন:

দুই ধরনের ব্ল্যাক আউট ঘটতে পারে।

একটিতে, ব্ল্যাক আউটের আগের সময়ের কিছু ঘটনা বা শব্দ মনে থাকতে পারে।

অন্যটিতে, স্মৃতি সম্পূর্ণ মুছে যাবে এবং কিছুই মনে থাকবে না।

এপিলেপটিক সিজ়ার, অজ্ঞান হওয়া, নিম্ন রক্তচাপ, সাইকোজেনিক সিজ়ার, নিম্ন ব্লাড সুগার, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এবং শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে হতে পারে ব্ল্যাকআউট। এর অন্যতম কারণ হতে পারে অতি মাত্রায় মদ্যপানের অভ্যাস।

কী কারণে ব্ল্যাটআউট হতে পার?

  1. মাস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে অস্বাভাবিক কম হতে পারে এমন অধিকারণের অবস্থা, যা মেডিকেল পরিভাষায় সিনকোপাল হোক বলে পরিচিত।
  2. রক্তচাপে একটি অস্বাভাবিক নিম্নতম স্তরে পৌঁছালে এমন ঘটনা সম্ভব।
  3. রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণে কমি হলে এমন অবস্থা, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হোক বলে পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীরা বা প্রয়োজনে ডায়াবেটিস ঔষধ প্রস্তুতির কারণে এই অবস্থা উত্পন্ন হতে পারে।
  4. যাদের খিঁচুনি বা এপিলেপসি রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা হতে পারে।
  5. রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ বাড়াতে থাকলে, রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সংঘটিত হতে পারে।
  6. মদ্যপান বা ধূমপানের অতিরিক্ত ব্যবহারে এমন অবস্থা হতে পারে।
  7. চাপ (স্ট্রেস) বা পরিবারের চাপে বাড়তি হলে এমন ঘটনা সম্ভব।
  8. কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও এমন অবস্থা হতে পারে।
  9. হার্ট সমস্যা বা হার্টের  ধমনি  দ্বারা মস্তিষ্কে পৌঁছানো রক্তের পথে কোন বাধা হলে, এই ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে।
  10. হার্টের পেশিতে জন্মগত ত্রুটি।
  11. রোজ পরিমিত জল না খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ডিহাইড্রেশনের কারণে জ্ঞান হারাতে পারে।
  12. শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হলে ক্ষণিকের জন্য কেউ সংজ্ঞাহীন হতে পারে।
  13. প্রিয়জনের মৃত্যু, কোনও দুঃসংবাদ শুনে বা আকস্মিক কঠিনতম পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে না পেরেও এমন হতে পারে।ব্ল্যাক আউট হওয়ার আগে কীভাবে বুঝবেন ও লক্ষণ কী কী

ব্ল্যাক আউট হওয়ার আগে কীভাবে বুঝবেন ও লক্ষণ কী কী

  1. আচানক দুর্বল অবস্থা হতে পারে অথবা হঠাৎ ভীষণ দুর্বল অনুভূতি।
  2. কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া।
  3. হাঁটতে বা দাঁড়াতে ভারসাম্যহীনতা অনুভূত করা।
  4. চোখের দৃষ্টি হতে পারে আবছা।
  5. মাথা ঘোরা।
  6. অকারণে অনেক ঘাম হওয়া।

কাজের চাপে কখনও ব্ল্যাকআউট হয়না

কর্মক্ষেত্রে কমবয়সি ব্যক্তিরা যখন অজ্ঞান হয়ে থাকে বা অতি প্রচণ্ড কাজের চাপে আছে, তখন মানসিক টেনশন হওয়া সাধারন ব্যাপার। এই অবস্থায় অনেকে অসুবিধার মুখোমুখি হয়ে যায়, কিন্তু এতে ব্ল্যাকআউট হয় না। স্ট্রেস টেনশনের সময়, মানসিক অবস্থা বিপন্ন হয়, তবে এটা সরাসরি ব্ল্যাকআউটে পরিণত হয়না। মনোবিদের ক্ষেত্রে, এই ধরণের অসুবিধা সাধারনত হয় এবং পরবর্তীতে মনোবল স্বীকৃতি পায়।

অনেক সময়, মানবদেহে টেনশন বা স্ট্রেসের কারণে সাধারনত ব্ল্যাকআউট হয়ে থাকে, তবে এটা কিন্তু একটি প্রান্তিক প্রতিক্রিয়া, যা মানসিক অবস্থার অস্থায়ী একটি অবস্থা হয়ে থাকে। এটি সময়ের সাথে নিজেই ঠিক হয়ে যায় এবং ব্যক্তি প্রচণ্ড কাজের চাপে বা অজ্ঞানের প্রভাবে অসুবিধা অনুভব করে না।

তবে, এই সময়ে কাউন্সেলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত যাতে এই ধরণের সমস্যা সমাধান হতে পারে এবং ব্যক্তি আত্মবিশ্লেষণ করে উচ্চ চাপের সম্মুখীন হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

দ্রুত কিছু টেস্ট করান

ইলেকট্রোলাইটস, ব্লাড সুগার, ইসিজি এবং ইকো-কার্ডিওগ্রাম একবার পরীক্ষা করতে অনুরোধ করছি। হার্টের সমস্যা অনুমান হলে এটি প্রোফেশনাল মোডে ধরা পড়বে। দুতিন মাস অথবা মাসের মধ্যে ব্ল্যাক আউট ঘটলে, হার্টের  কোন সমস্যা আছে কিনা তা নিরীক্ষণ করতে হবে। পরিবারে  হার্টের কারণে ব্ল্যাক আউট অথবা অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে উদ্বিগ্ন হতে হবে।এমনকি একবার ব্ল্যাক আউট হলে, বেশিরভাগ মামলার পর ব্যক্তিরা স্বজীবনে স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং তারা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার দরকার মনে করেন না। এছাড়াও, কোন ধরণের গ্যাস অথবা অসুস্থতা হলে তা হয়তো বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করতে উপযুক্ত হতে পারে। ব্ল্যাক আউট হওয়ার কারণ যা হোক, এটি সঠিকভাবে অনুসন্ধান করতে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে একবার দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন ব্ল্যাকআউটের সমস্যা?

ব্ল্যাকআউট প্রতিরোধে করনীয়:

  1. কর্মক্ষেত্র এবং পারিবারিক জীবনে স্ট্রেস মুক্ত থাকার জন্য প্রয়াস করুন, আপনার কাজের চাপকে সবার মধ্যে ভাগ করতে সাহায্য নিন এবং জীবনের সব ধরনের স্ট্রেস থেকে দূরে থাকুন।
  2. সারা দিনের কাজে বিরতি নিন এবং টানা কাজ না করতে অনুমতি দিন।
  3.  নিয়মিত রুটিন মেনে চলুন, যেমন পড়াশোনা, কাজ, খাদ্যের সময়সূচি সঠিক রাখুন।
  4. সুস্থ জীবনযাপন করুন এবং অনিয়মের মুখোমুখি হবার চেষ্টা করুন।
  5.  সব নেশাজাতীয় বদভ্যাস থেকে দূরে থাকুন, মদ্যপান করবেন না।
  6. সারা দিনে একান্ত সময় নিন এবং যোগব্যায়াম, মেডিটেশন অথবা আপনার পছন্দের কোনও কার্য করুন।
  7. ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতি দিন ইনসুলিন নেওয়ার আগে ব্লাড সুগার চেক করুন।
  8. পরিবার-প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান।

একবারও ব্ল্যাকআউট হলে, অতি দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো কিছু হয়নি ভেবে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, এটি হতে পারে কোনো গুরুতর রোগের পূর্বলক্ষ।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post